এ বছর বাংলাদেশের এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটিই জিতেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মাদ্রিদভিত্তক প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ডাইরেকশন (বিআইডি)’র কোয়ালিটি কমিটমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।
গত ২৪ অক্টোবর প্যারিসে এই সম্মানজনক ‘কিউসি স্টার গোল্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১১’ গ্রহণ করার ক্ষণটিকে স্মরণ করে ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকরের প্রধান সৈয়দ খালিদ হোসেন বলছিলেন, এটি ছিলো জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এমন একটি পুরস্কার পাবো।
সবসময় কাজ করে গেছি, উদ্যোগটি ছোট হলেও কেবল মুনাফার পেছনে ছুটিনি। পণ্যের মানের প্রশ্নে ছাড় দিইনি এতটুকু। হয়তো তারই প্রতিদান এ পুরস্কার।’
টেক্সটাইল খাত সারাবিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের অনেকেরই ব্যবসা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশাল অংকের বিনিয়োগের। তার মধ্যে পণ্যের মানের বিচারে ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকর যে পুরস্কৃত হতে পারে এমনটা সত্যিই ভাবা কঠিন, বলেন খালিদ হোসেন।
দেশের হাসপাতালগুলোতে মানসম্মত টেক্সটাইল পণ্য হসপিটাল লিনেন, টাওয়ায়েল, অ্যাপারেলস, রোল ফেব্রিকস ইত্যাদি সরবরাহ করে ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকর। ২০০২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি ও আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ইউরোপীয় দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে এসব পণ্য রপ্তানি করে ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকর।
এমন একটি অর্জনের পেছনে প্রধানত কোন কোন বিষয় কাজ করেছে জানতে চাইলে খালিদ হোসেনের উত্তর, পণ্যের মানের প্রতি কমিটমেন্ট আমাদের রয়েছে, তার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরবরাহ, যথাযথ যোগাযোগ ও ক্রেতার চাহিদার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এমন পুরস্কার জয়ের আস্থা অর্জন সম্ভব।
এমনও হয়েছে বড় অংকের টাকা লোকসান গুনেছি কিন্তু শিপমেন্ট মিস করিনি কিংবা পণ্যের মান কমাইনি। এ পুরস্কার তারই প্রতিদান, বলেন তিনি।
বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এতবড় প্রতিষ্ঠানের কাছে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়া প্রসঙ্গে খালিদ হোসেন বলেন, যখন এমন একটি পুরস্কারের মনোনয়নের ব্যাপারে বিআইডি থেকে কাগজপত্র আসে প্রথমে বিশ্বাসও করতে পারিনি। মনে হয়েছিলো অনলাইনে ই-মেইলে অনেক প্রতারণা চলে। বিআইডি’র ওয়েব সাইট ঘেঁটে যখন জানলাম টাটা, অ্যালকোয়া হাওমেট, টার্নার কন্সট্রাকশন, হংইয়েন ইলেক্ট্রনিক্স এর মতো বিশ্বের সব নামকরা প্রতিষ্ঠান এদের পুরস্কার জিতেছে তাতে আরও সন্দেহ বাড়লো। কিন্তু বিআইডি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলো আরও বিভিন্নভাবে। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হলাম, বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকরকেও একটি পুরস্কার দিতে যাচ্ছে।
সন্দেহ ও উত্তেজনা দুটোই ছিলো। তা নিয়েই পাড়ি জমালাম প্যারিসের উদ্দেশে। অ্যাওয়ার্ড হাতে পেয়ে মনে হয়, সত্যিই বিরল সম্মানের অ্যাওয়ার্ডটি হাতে নিয়েছি। তখন যেনো আকাশে উড়ছিলাম, বললেন খালিদ হোসেন।
খালিদ হোসেনের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন বিআইডি’র প্রেসিডেন্ট হোসে ই পিয়েত্রো।
ভারটেক্স অ্যান্ড ডেকর-কে এখন একটি ব্র্যান্ড নেমে পরিণত করতে চান খালিদ হোসেন। তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার, যিনি ছোট্ট এই প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন ও হিসাব বিভাগ দেখেন, পুরস্কার জয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। বললেন, নিজেরা একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাই, কখনো মনে হয়নি সেই কাজ এমন পুরস্কার এনে দেবে, যা দেশের জন্যই গৌরবের।
বাংলাদেশ সময় ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১১
No comments:
Post a Comment